শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৮:১০ অপরাহ্ন

টেকনাফে নলকূপ থেকে পানি যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, পানির সংকটে ভুগছেন স্থানীয়রা

জিয়াবুল হক / ৩৮ বার পড়া হয়েছে
আপডেট সময় : শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৮:১০ অপরাহ্ন


তীব্র গরম, অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাখ লাখ মানুষ। তাদের পানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে আশপাশের গ্রামের নলকূপ ও পুকুর থেকে। এভাবে শত শত লিটার পানি চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে। এদিকে ঠিকমতো পানি না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ:
তীব্র গরমে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা গ্রামে যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে তাদের থেকে পানি কিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না নলকূপে। আগে যেসব নলকূপে নিয়মিত পানি পাওয়া যেত এখন সারাদিনে সেই নলকূপে এক বালতিও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষ করে টেকনাফ পৌরসভা, সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও সাবরাংয়ে, উখিয়ার রাজাপালং, পালংখালি ও জালিয়াপালং ইউনিয়নে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওই গ্রামের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ঠিকমতো খাবার পানি পাচ্ছে না।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, আমাদের গ্রামে যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে, তারাই শুধু খাবার ও রান্নার জন্য পানি পাচ্ছেন। কিন্তু আগে আমরা যেসব নলকূপ থেকে খাবার পানি পেতাম এখন সেই নলকূপ থেকে পানি পাচ্ছি না। যাদের গভীর নলকূপ আছে তাদের বাড়ি থেকে কোনো রকম এক বালতি পানি এনে রান্নার কাজে ব্যবহার করছি।

টেকনাফ পৌরসভার উত্তর চৌধুরী পাড়া এলাকার আবদুল আজিজ বলেন, পৌরসভাতে তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যাদের বাড়িতে গভীর নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে, সেখান থেকে এক বালতি পানি নিতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। গোসল করা, কাপড় ধোঁয়া, রান্না করার জন্য পানির চিন্তা করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, অথচ এসব গভীর নলকূপ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শত শত লিটার পানি প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে আমরা নলকূপ থেকে ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না।

কুতুপালংয়ের বাসিন্দা রশিদ আমিন বলেন, ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা খাবার পানি থেকে শুরু করে ব্যবহারের সব পানি পাচ্ছেন। আমরা খাবার পানিও ঠিকমতো পাচ্ছি না। রোহিঙ্গাদের জন্য এনজিওরা পানি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়, আমাদের নলকূপে পানি উঠছে না।

পালংখালির রহিমা বেগম বলেন, গত এক মাস ধরে বাড়ির নলকূপ থেকে ঠিকমতো পানি উঠছে না। পানি নিচের স্তরে পড়ে গেছে। এভাবে পানি নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি। এরমধ্যে পুকুরও শুকিয়ে গেছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ার বলেন, আমার ইউনিয়নের অনেক আগে থেকে পানির সমস্যা। নলকূপে পানি পাওয়া কঠিন। যাদের বাড়িতে পানির সংকট তাদের জন্য আগে থেকে সরকারিভাবে গভীর নলকূপ বসিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে খাবার পানি দেওয়া হচ্ছে। তবে ইদানিং তীব্র গরমে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে পানির সংকট তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটির মহাসচিব গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দিন দিন খাবার পানির সংকট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে এবার তীব্র গরমে নলকূপের পানি নিচের স্তরে চলে গেছে। অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শত শত লিটার পানি গ্রামের গভীর নলকূপ থেকে লোকজন এনজিওদের কাছে বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, পৌরসভাসহ যেসব গ্রামে খাবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে, সেখানে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েকটি এনজিওর সহযোগিতায় পৌরসভায় যেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সেখানে দেওয়া হচ্ছে। আরও যেসব গ্রামে পানির সংকট আছে সেখানেও পানির ব্যবস্থা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো সংবাদ দেখুন