মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ছাড়িয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দিনের মাঝামাঝিতে হওয়া এই ভূমিকম্পের পরের দিনও ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবর বলছে, দেশটির দ্বিতীয় বৃত্তর শহর মান্দালয়ে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ভূমিকম্প, কেন্দ্রস্থলও সেখান থেকে বেশি দূরে না। এতে সেখানকার বহু ভবন মাটিতে ধসে পড়েছে।
ভূমিকম্প পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি আফটারশক (পরাঘাত) হয়েছে। এরমধ্যে একট আফটারশক ছিল ৬.৪ মাত্রার। মিয়ানমারের জান্তা সরকার জানিয়েছে, ‘‘এখন পর্যন্ত ১ হাজার দুজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ২,৭৭৬ জন আহত হয়েছেন। ৩০ জনের হদিস পাওয়া যায়নি।’’
জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মসজিদের একাংশ ধসে ৩ জনের মৃত্যুজুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মসজিদের একাংশ ধসে ৩ জনের মৃত্যু
হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, ‘‘ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’
দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধকবলিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে সড়ক ও সেতু ভেঙে পড়ায় চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া রাজধানী নেপিদোর বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভবন মাটিতে মিশে গেছে। ধ্বংস্তস্তূপ থেকে আক্রান্তদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
ভূমিকম্প ভয়াবহ আঘাত হানা এলাকাগুলোতে ‘‘জরুরিভিত্তিতে রক্তের’’ চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। মান্দালয়ের সড়কগুলোতে বড় ধরনের ফাটল দেখা গেছে। মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে কিছু এলাকায় উদ্ধারকারীদের পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবন ভেঙে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ৮ জনের নিহত হয়েছেন। মুহূর্তে বিপর্যয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এলাকাটি।
খবরে বলা হয়, রাজধানীর কাছাকাছি জনপ্রিয় চাতুচাক মার্কেটে ৩৩ তলার একটি নির্মাণাধীন ভবন ক্রেনসহ ধসে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এতে চারপাশে বিস্তৃত ধুলোর মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজনকে আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি করে দৌড়াতে দেখা গেছে।
ব্যাংককের কেন্দ্রস্থলে সাইরেনের প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। যানজটে আটকাপড়ে ব্যস্ত সড়কগুলো। র্যাপিড ট্র্যানজিট সিস্টেম ও সাবওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্প যে এলাকাটিতে আঘাত হেনেছে, সেটি ভূমিকম্পপ্রবণ। কিন্তু এসব ভূমিকম্প খুব বড় না। থাই রাজধানী থেকে যা টের পাওয়ার ঘটনাও বিরল। ব-দ্বীপের ওপর অবস্থিত ব্যাংককে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মাঝারি।
প্রথমে ভূমিকম্পের বিষয়টি বুঝতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ব্যাংককের একটি ভবনে কাজ করা অপরিল কানিচাওয়ানকুল। তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, আমার মাথা ঘোরাচ্ছে।’’ সহকর্মীদের নিয়ে ভবনের দশতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যান তারা।
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পুমথাম উইচাইয়াচি বলেন, ‘‘ব্যাংককে ভবনধসে নিখোঁজ রয়েছেন ৯০ জন।’’
নিহতদের মধ্যে দুজন নির্মাণশ্রমিক। ভবন থেকে ইট-পাথরের টুকরা পড়ে তাদের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।